গতকাল শনিবার ছিল বাংলা নববর্ষ, ছিল বৈশাখী ঝড়, আর সাকিব আল হাসানের কলকাতা নাইট রাইডার্সকে উড়িয়ে দেওয়ার তাণ্ডব। কলকাতার এই সাবেক সদস্যের একার ঝড়েই যেন উড়ে গেল কলকাতা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর সাকিবকে নিয়ে কলকাতার সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়’ শিরোনাম করেছে ‘বাতিল বাঙালির নববর্ষের প্রতিশোধ’।
আসলেও তাই, সাকিব তো এক প্রকার বাতিলই ছিলেন কলকাতার কাছে। কলকাতার কাছে সুযোগ ছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে ভাবার সময়ই পায়নি দলটি। রাইট টু ম্যাচ কার্ডে তাঁকে ভিত্তিমূল্যেই দলে রেখে দিতে পারত তারা। কিন্তু সাকিবের ব্যাপারে যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। দলে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে—এমন সিদ্ধান্তের পরই সাত বছর পর দল ছেড়ে সাকিবকেও উঠতে হয় নিলামে। দল ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের এই অধিনায়কও ছিলেন নীরব। তবে তাঁকে লুফে নিতে ভুল করেনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
সাকিবকে দলে ভিড়িয়ে হায়দরাবাদ যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন সাকিব ব্যাটে-বলে। সেই কলকাতার বিপক্ষে ২১ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট, ব্যাট হাতে ২১ বলে ২৭ রান, দৃষ্টিনন্দন দুটি ক্যাচ, টি-টোয়েন্টির ছোট পরিসরে সফলতায় আর কী লাগে! ম্যাচ জিতে সাকিবের কাছে সানরাইজার্সের যা চাওয়া ছিল, সেটা তো পূরণ হয়েছে। কিন্তু সাকিবের কাছে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স একটু বেশিই স্পেশাল। কারণ, এমন সফলতার রাত তিনি যে উপহার পেয়েছেন তাঁর সাবেক দলের বিপক্ষেই। দল তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সময় সাকিব মুখ খোলেননি। কিন্তু অভিজ্ঞ সাকিব ব্যাটে-বলেই কি জবাব দিয়ে দিলেন না?
আর কলকাতা? সাকিবের সঙ্গে সাত বছরের দীর্ঘ সময়ের বন্ধন ছিন্ন সময়ের মুহূর্তে কলকাতা ছিল নীরব। অবস্থাটা ছিল এমন যেন সাকিব বিদায় হলেই দলটি বেঁচে যায়। টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে অযোগ্য সাকিবের বিদায়টা হয়তো আক্ষেপ নিয়েই ঘটে। দীর্ঘ সময়ে দলের সঙ্গে ভালোবাসা ও আনুগত্যের যে সম্পর্ক, তাতে এমন বিদায় কারোই কাম্য নয়। কিন্তু গতকাল সাকিবের আক্ষেপ ঘুচলেও কলকাতার হাহাকার শুরু হয়েছে। দলটির হাহাকারের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে কলকাতার বিভিন্ন পত্র- পত্রিকা। সেখানে সাকিব-বন্দনায় মেতে ওঠার পাশাপাশি কলকাতা নাইট রাইডার্সেরও সমালোচনা হচ্ছে দেদার। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় চলছে টিম ম্যানেজমেন্টের মুণ্ডুপাত।
সাবেক দলের বিপক্ষে এমন দুরন্ত পারফরম্যান্স সাকিবের কাছে ‘পৈশাচিক আনন্দ’ এনে দিলেও কলকাতা যে পুড়ছে আক্ষেপের অনলে। আফসোসের সুর হয়তো মনে মনে, ‘ইশ! কেন যে সাকিবকে ছাড়লাম!’
No comments:
Post a Comment